পবাসি জীবন
যখন বিদেশ আসার জন্য পাসপোর্ট করলাম তখন চোখে ছিল রঙ্গীন স্বপ্ন। বিদেশ গিয়ে অনেক অনেক টাকা উপার্জন করব। জীবনের জাহাজ নোঙ্গর করবে মধ্যবিত্ত ছেড়ে উচ্চ বিত্তের বন্দরে। যেখানে থাকবেনা না পাওয়ার কোন আর্তনাদ। তখনকার ভাবনাগুলি ছিল সব পজিটিভ। সব ছিল রঙ্গীন। কারণ জানতাম না বিদেশে কি করতে হয়। আর কাজের কেমন পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। শুধু জানতাম বিদেশ মানেই অনেক অনেক টাকা। তার পর একে একে ১৪ টি বছর কেটে গেল। সে এক মহা রণ। যাকে বলি জীবন সংগ্রাম। কিংবা জীবন যুদ্ধ। এই যুদ্ধে জয় পরাজয় নেই। এখানে কথা হল do or die. কর না হয় মর। আমার দেখা অনেকেই জীবন ও জীবিকার তাগিদে এসেছিল এরা আর কোন দিন ফিরবেনা। না ফেরার দেশে চলে গেছে। আর আমরা যারা এখনও আছি তাদের ১৪বছর আগের রঙ্গীন স্বপ্ন গুলি দিনদিন রঙ হারিয়ে সাদা হয়ে গেছে। হয়ত আর কিছুদিন বেঁচে থাকলে সাদাও কাল হয়ে যাবে। এভাবে শেষ হয়ে যায় প্রবাসে পাড়ি জমানো বেশির ভাগ মানুষের জীবন। আমি গত বছর ডিসেম্বরে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম আমার কোম্পানির কাজে। ছিলাম ওখানে ৬ মাস। যে প্রজেক্টে কাজ করেছিলাম সেটা ছিল জহর বারুর কিং সুলতানের প্রজেক্ট। এটা কন্ডো ৮৬ তলা হবে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে পাবনার আতাইকুলার বেশ কিছু লোক পেলাম। আরো পেলাম নরসিংদী, ফরিদপুর, যশোরের বেশ কিছু বাংলাদেশী। আমি ছয় মাস কাজ করতে গিয়ে যা দেখলাম তার একদিনের কথা বলব। পাবনার ছেলেটার নাম রোকন। সে ক্রেনের সিগনাল দেয়। ক্রেন দিয়ে একটা ওয়েল্ডিং মেশিন সরাতে সে ক্রেন অপারেটরকে বলল। (অপারেটর মালেয়শিয়ান)। অপারেটর ওয়েল্ডিং মেশিনটা কেরি করে কোথায় রাখবে সে রোকনের কাছে জানতে চাইল। রোকন বলল অপেক্ষা করতে। আর কোন কথা না বলে অপারেটর ক্রেন থেকে নেমে রোকনকে কিল, ঘুষি লাথি এলোপাথারি মারতে থাকে। মেরে রক্তাক্ত করে দিল। আমি বসকে বললাম বিচার করতে। বস তাকে শাস্তি হিসাবে ১ মাসের জন্য বরখাস্ত করে। আর রোকনকে ডাক্তার আর ঔষদের টাকা দেয়। এই হল বিচার। আমি জানিনা এভাবে কত শত বাংলাদেশী ভাই সারা বিশ্বে মার খাচ্ছে প্রতিদিন। তারপরও দেশে ফোন করে বলতে হয় আমি ভাল আছি। তোমরা ভালতো?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন